Health

Cashless Treatment for Accident Victim: গোল্ডেন আওয়ারে জীবন বাঁচাবে এই প্রকল্প, পথ দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য কেন্দ্রের বিরাট উদ্যোগ

নয়া দিল্লি: পথদুর্ঘটনায় আহতদের আর্থিক চিন্তামুক্ত ও দ্রুত চিকিৎসা পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে ভারত সরকার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। দেশব্যাপী চালু করা হয়েছে ‘পথ দুর্ঘটনায় আহতদের জন্য ক্যাশলেস চিকিৎসা প্রকল্প, ২০২৫’ (Cashless Treatment of Road Accident Victims Scheme, 2025)। এই প্রকল্পের অধীনে, দুর্ঘটনায় আহত প্রত্যেক ব্যক্তি ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদহীন চিকিৎসার সুবিধা পাবেন। গত ৫ মে, ২০২৫ থেকে এই পরিষেবা কার্যকর হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক মন্ত্রক (MoRTH) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করছে, যার মূল উদ্দেশ্য হল দুর্ঘটনার পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘গোল্ডেন আওয়ার’-এর মধ্যে আহতদের চিকিৎসা শুরু করা এবং প্রাণহানি কমানো। প্রায়শই দেখা যায়, দুর্ঘটনার পর প্রাথমিক চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে না পারার কারণে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটায় বা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই নতুন প্রকল্প সেই সমস্যা সমাধানে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

প্রকল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি:

  • নগদহীন চিকিৎসার সীমা: প্রতিটি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে, আহত ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত নগদহীন চিকিৎসার সুবিধা পাবেন।
  • চিকিৎসার সময়সীমা: দুর্ঘটনার তারিখ থেকে প্রথম সাত দিন পর্যন্ত এই সুবিধা পাওয়া যাবে।
  • কারা এই সুবিধা পাবেন: ভারতের যেকোনো প্রান্তে, মোটর গাড়ির দ্বারা সংঘটিত পথ দুর্ঘটনায় আহত যেকোনো ব্যক্তি এই প্রকল্পের আওতায় আসবেন। আহত ব্যক্তির বয়স, উপার্জন বা সামাজিক শ্রেণি নির্বিশেষে এই সুবিধা প্রযোজ্য।
  • হাসপাতাল: সরকার কর্তৃক নির্ধারিত (ডেজিগনেটেড) হাসপাতালগুলিতে এই ক্যাশলেস চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়া যাবে। যদি কোনো কারণে আহত ব্যক্তিকে প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কোনো হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, সেক্ষেত্রে রোগীকে স্থিতিশীল করার চিকিৎসাই কেবল করা হবে এবং পরবর্তীতে প্রকল্পের আওতাভুক্ত হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার ব্যবস্থা করা হবে।
  • বাস্তবায়নকারী সংস্থা: ন্যাশনাল হেলথ অথরিটি (NHA) এই প্রকল্পটি রূপায়ণের প্রধান দায়িত্বে থাকবে। রাজ্য স্বাস্থ্য সংস্থা, পুলিশ, এবং হাসপাতালগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই কাজ সম্পন্ন করা হবে। প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সড়ক সুরক্ষা পরিষদ (State Road Safety Council) নিজ নিজ এলাকায় প্রকল্পটি কার্যকর করার জন্য নোডাল এজেন্সি হিসেবে কাজ করবে।
  • তদারকি: প্রকল্পের সঠিক রূপায়ণ পর্যবেক্ষণ করার জন্য কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ সচিবের নেতৃত্বে একটি ১১ সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রী শ্রী নীতিন গড়করি এর আগে একাধিকবার এই ধরনের একটি প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার পর এবং বিভিন্ন পাইলট প্রকল্পের সাফল্যের নিরিখে অবশেষে এই প্রকল্পটি দেশব্যাপী চালু করা হল। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের মার্চ মাসে চণ্ডীগড়ে একটি পাইলট প্রকল্প শুরু করা হয়েছিল, যা পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি রাজ্যে সম্প্রসারিত হয়।

কীভাবে এই সুবিধা পাওয়া যাবে?

  1. দুর্ঘটনার পর যত দ্রুত সম্ভব আহত ব্যক্তিকে প্রকল্পের তালিকাভুক্ত সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
  2. পুলিশকে দুর্ঘটনার বিষয়ে অবহিত করতে হবে, কারণ চিকিৎসার জন্য এফআইআর (FIR) প্রয়োজন হতে পারে।
  3. তালিকাভুক্ত হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য কোনো নগদ টাকা জমা দিতে হবে না। সরকার সরাসরি হাসপাতালের সঙ্গে বিল মিটিয়ে নেবে।
  4. চিকিৎসার সমস্ত কাগজপত্র, প্রেসক্রিপশন, বিল এবং এফআইআর-এর কপি যত্ন সহকারে রাখতে হবে, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রকল্পটি পথ নিরাপত্তায় একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং দুর্ঘটনায় আহত বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়ক হবে। আর্থিক অনটনের কারণে যাতে কারোর চিকিৎসা ব্যাহত না হয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করাই এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।

Back to top button
Enable Notifications OK No thanks