WBSEDCL Bill Payment: পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থা বা WBSEDCL-এর বিদ্যুৎ বিল পেমেন্টের পদ্ধতিতে একটি বড়সড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। এখন থেকে গ্রাহকদের সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনলাইনে বিল মেটাতে হবে। পুরনো সিস্টেমের সাথে এর কোনো মিল নেই এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম বদলে গেছে, যা না জানলে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন।
নতুন নিয়মে বিল পেমেন্টের পদ্ধতি
WBSEDCL-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের হোমপেজ আগের মতোই থাকলেও, পেমেন্ট করার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ নতুন।
- প্রথমে ‘অনলাইন পেমেন্ট’ এবং তারপর ‘কুইক পে’ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
- এরপর একটি নতুন পেজ খুলবে যেখানে চারটি অপশন দেখা যাবে – কোটেশন পেমেন্ট, পোস্টপেড এনার্জি বিল, স্মার্ট প্রিপেড অফলাইন এবং প্রিপেড।
- সাধারণ বাড়ির গ্রাহকদের, যাদের তিন মাস অন্তর বিল আসে, তাদের ‘পোস্টপেড এনার্জি বিল’ অপশনটি বেছে নিতে হবে।
- এরপর কনজিউমার নম্বর ও ক্যাপচা কোড দিয়ে ভেরিফাই করতে হবে।
আগের সিস্টেমে এখানে গ্রাহকের নাম, ঠিকানা এবং কোন মাসে কত বিল বকেয়া আছে তার বিস্তারিত বিবরণ দেখা যেত। কিন্তু নতুন নিয়মে সেই সমস্ত তথ্য আর দেখানো হচ্ছে না।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তনগুলি কী কী?
নতুন পেমেন্ট সিস্টেমে বেশ কিছু আশ্চর্যজনক পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করতে পারে।
- বিলের ব্রেকডাউন নেই: আপনার মোট কত টাকা বিল বকেয়া বা কোন মাসের বিল বাকি, সেই তথ্য এখন আর ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে না।
- নিজেই টাকার অঙ্ক বসাতে হবে: সিস্টেম আপনাকে মোট বকেয়া দেখানোর পরিবর্তে, একটি ফাঁকা বক্স দিচ্ছে যেখানে আপনাকে নিজের ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসাতে হবে। আপনি সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত পেমেন্ট করতে পারবেন।
- মাসভিত্তিক পেমেন্টের সুবিধা বন্ধ: আগে গ্রাহকরা চাইলে তিনটি বিলের মধ্যে একটি বা দুটি মাসের বিল আলাদা করে পেমেন্ট করতে পারতেন। সেই সুবিধা এখন সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হয়েছে।
- আংশিক পেমেন্টের বিভ্রান্তি: ধরা যাক, আপনার বিল ৯০০ টাকা। আপনি চাইলে এখন ৬০০ টাকা পেমেন্ট করতে পারবেন। কিন্তু বাকি ৩০০ টাকা পরবর্তী বিলে কীভাবে যুক্ত হবে, সেই বিষয়ে ওয়েবসাইটে কোনো স্পষ্ট তথ্য নেই। এমনকি, ২৫ টাকার বিল মেটাতে গেলেও সিস্টেম আপনাকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা দিতে বাধ্য করছে। এই অতিরিক্ত ২৫ টাকা আদৌ অ্যাডজাস্ট হবে কিনা, তা নিয়েও ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
পেমেন্টের রসিদ এবং হিস্টরি দেখার নিয়ম
পেমেন্ট সফল হওয়ার পর রসিদ জেনারেট হলেও, তা আগের থেকে অনেক বেশি সময় নিচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হল, হোম পেজের ‘ভিউ পেমেন্ট রিসিট’ অপশনটি আর কাজ করছে না। রসিদ পুনরায় ডাউনলোড করার জন্য গ্রাহককে ‘কুইক পে’ > ‘পেমেন্ট হিস্টরি’ ট্যাবে যেতে হবে। সেখানে কনজিউমার আইডি দিয়ে সার্চ করলে স্ট্যাটাস দেখা গেলেও, বিলের মাসের বিবরণের জায়গায় ‘EHP’-এর মতো কিছু কোড দেখা যাচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা কঠিন।
নতুন সিস্টেমের মূল সমস্যা
এই মুহূর্তে নতুন সিস্টেমের দুটি বড় সমস্যা গ্রাহকদের ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
- লেট ফাইন জানার উপায় নেই: যদি আপনার বিলের ডিউ ডেট পেরিয়ে যায়, তাহলে লেট ফাইন সহ মোট কত টাকা জমা দিতে হবে, তা এই ওয়েবসাইট থেকে জানার কোনো উপায় নেই। ফলে, আপনি কম টাকা পেমেন্ট করলে আপনার লাইন কেটে যাওয়ার আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে।
- থার্ড-পার্টি অ্যাপ বন্ধ: Phone Pe, Google Pay-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপগুলি থেকে আপাতত WBSEDCL-এর বিল পেমেন্ট করা যাচ্ছে না। সেখানে ‘আনশিডিউলড ডাউনটাইম’ মেসেজ দেখানো হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, গ্রাহকদের অনলাইনে আংশিক পেমেন্ট (Part Payment) করার সুবিধা দেওয়ার জন্যই হয়তো এই সিস্টেম আনা হয়েছে। তবে এই বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব এবং বিভিন্ন প্রযুক্তিগত ত্রুটি সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তিতে ফেলেছে।


