Vegetarian City: ভাবুন তো এমন এক শহরের কথা, যার সীমানার মধ্যে প্রবেশ করলে আপনি কোথাও মাংস কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন না, এমনকি কোনো রেস্তোরাঁতেও আমিষ খাবারের দেখা পাবেন না। এটি কোনো কল্পনা নয়, বাস্তবের মাটি ছুঁয়ে থাকা এক সত্যি। ভারতের গুজরাট রাজ্যে অবস্থিত “পালিতানা” (Palitana) শহরটিই হলো পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ নিরামিষ শহর, যা তার অহিংস নীতির জন্য বিশ্বজুড়ে এক অনন্য পরিচয় তৈরি করেছে।
পালিতানা: এক পবিত্র তীর্থভূমি
পালিতানা শুধুমাত্র একটি সাধারণ শহর নয়, এটি জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক অত্যন্ত পবিত্র তীর্থস্থান। এই শহরে অবস্থিত শত্রুঞ্জয় পাহাড়ে রয়েছে শত শত নয়নাভিরাম জৈন মন্দির, যা এই স্থানটিকে আধ্যাত্মিকতার এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে। জৈন ধর্মের মূল ভিত্তি হলো ‘অহিংসা পরম ধর্ম’— অর্থাৎ, কোনো প্রাণীর প্রতি হিংসা না করা। এই ধর্মের অনুগামীরা জীবের প্রতি করুণা এবং সহানুভূতির শিক্ষাকে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মেনে চলেন। তাঁদের বিশ্বাস, প্রতিটি প্রাণেরই বেঁচে থাকার সমান অধিকার রয়েছে। এই গভীর দর্শনই পালিতানাকে তার অনন্য পরিচয় দিয়েছে।
যে আন্দোলনের ফলে জন্ম নিল এক নতুন ইতিহাস
পালিতানার এই নিরামিষাশী পরিচয় একদিনে তৈরি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে এখানকার জৈন সন্ন্যাসী ও সাধারণ নাগরিকদের এক দীর্ঘ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন। তাঁরা শহরের পবিত্রতা এবং অহিংসার নীতিকে অক্ষুণ্ণ রাখতে সরকারের কাছে একটি জোরালো দাবি জানান। তাঁদের মূল দাবি ছিল, এই পবিত্র শহরে যেন কোনো প্রকার প্রাণহত্যা, মাংস বিক্রি এবং এর বিপণন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়। অহিংসার প্রতি তাঁদের এই অবিচল নিষ্ঠা এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ, সরকার এই দাবিকে সম্মান জানায় এবং আইনতভাবে পালিতানাকে একটি “মাংসহীন অঞ্চল” হিসেবে ঘোষণা করে। এর ফলে পালিতানা বিশ্বের দরবারে প্রথম সম্পূর্ণ নিরামিষ শহর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
এক নৈতিক ও পরিবেশবান্ধব জীবনের প্রতীক
আজকের দিনে পালিতানা শুধুমাত্র একটি তীর্থক্ষেত্র নয়, এটি বিশ্ববাসীর কাছে এক নৈতিক ও পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনের জীবন্ত প্রতীক। শহরের প্রতিটি বাজার, দোকান এবং রেস্তোরাঁ শুধুমাত্র নিরামিষ খাবারই পরিবেশন করে। এই শহরের বাতাসে যেন মিশে আছে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা। পালিতানা আমাদের দেখায় যে, মানুষ যদি চায়, তবে প্রকৃতি এবং অন্যান্য প্রাণীদের সঙ্গে কত সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে পারে। এই শহর এক নীরব বিপ্লবের নাম, যা প্রমাণ করে যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমেও পৃথিবীতে এক ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব।


