Vasuki Indicus: গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলের পানান্ধরো লিগনাইট খনি থেকে এমন এক জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানী ও ইতিহাসপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই যুগান্তকারী আবিষ্কার পৃথিবীর প্রাগৈতিহাসিক যুগের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। বিজ্ঞানীরা প্রায় ৪.৭ কোটি বছর পুরনো এক বিশাল আকারের সাপের জীবাশ্ম খুঁজে পেয়েছেন, যা আমাদের কল্পনার সীমাকেও ছাড়িয়ে যায়।
এই আবিষ্কারটি আমাদের গ্রহের বুকে লুকিয়ে থাকা অজানা রহস্যের একটি ছোট্ট ঝলক মাত্র। পৃথিবীর মাটির নিচে যে কত কোটি বছরের ইতিহাস চাপা পড়ে আছে, তা এই ঘটনাটি আরও একবার প্রমাণ করল।
বাসুকি ইন্ডিকাস: এক প্রাগৈতিহাসিক দৈত্য
বিজ্ঞানীরা এই সদ্য আবিষ্কৃত প্রাগৈতিহাসিক সাপটির নামকরণ করেছেন “বাসুকি ইন্ডিকাস” (Vasuki Indicus)। এই নামটি ভারতীয় পুরাণের কিংবদন্তি চরিত্র থেকে অনুপ্রাণিত। হিন্দু পুরাণে, বাসুকি নাগ ছিলেন সর্পদের রাজা এবং তিনি ভগবান শিবের গলায় অলঙ্কার হিসেবে বিরাজ করতেন। তাঁর শক্তি ও বিশাল আকারের কথা মাথায় রেখেই এই নামকরণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের গবেষণা অনুযায়ী, এই সাপের বৈশিষ্ট্যগুলো ছিল চমকে দেওয়ার মতো:
- বিশালাকার দৈর্ঘ্য: অনুমান করা হচ্ছে, বাসুকি ইন্ডিকাস লম্বায় ১০.৯ থেকে ১৫.২ মিটার অর্থাৎ প্রায় ৩৬ থেকে ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারত। আজকের দিনের অ্যানাকোন্ডা বা পাইথনের থেকেও এটি বহুগুণে বড় ছিল।
- প্রাচীন অস্তিত্ব: জীবাশ্মটির বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৪.৭ কোটি বছর। অর্থাৎ, সেই সময়ে পৃথিবীতে এই বিশাল দানব সদৃশ প্রাণীটি বিচরণ করত যখন স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সবেমাত্র নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করেছিল।
আবিষ্কারের বিবরণ
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| নাম | বাসুকি ইন্ডিকাস (Vasuki Indicus) |
| আবিষ্কারের স্থান | পানান্ধরো লিগনাইট খনি, কচ্ছ, গুজরাট |
| আনুমানিক বয়স | ৪.৭ কোটি বছর |
| আনুমানিক দৈর্ঘ্য | ১০.৯ থেকে ১৫.২ মিটার (প্রায় ৫০ ফুট) |
বিজ্ঞানের চোখে এই আবিষ্কারের গুরুত্ব
এই আবিষ্কারটি শুধুমাত্র একটি নতুন প্রজাতির সন্ধান দেয়নি, বরং এটি সেই সময়ের পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র এবং ভৌগোলিক অবস্থা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে। বাসুকি ইন্ডিকাসের মতো বিশাল আকারের সরীসৃপের অস্তিত্ব প্রমাণ করে যে, তৎকালীন ভারতের আবহাওয়া বেশ উষ্ণ ছিল, যা এই ধরনের ঠান্ডা রক্তের প্রাণীদের বেঁচে থাকার এবং আকারে বড় হওয়ার জন্য আদর্শ ছিল।
গুজরাটের কচ্ছ অঞ্চলের এই খনিটি অতীতেও বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর জীবাশ্মের জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু বাসুকি ইন্ডিকাসের আবিষ্কার এই অঞ্চলটিকে বিশ্বজুড়ে প্যালিওন্টোলজিস্টদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এই আবিষ্কার আমাদের সভ্যতার সীমার বাইরে থাকা এক অজানা পৃথিবীর দিকে নতুন করে তাকাতে বাধ্য করছে, যেখানে এমন সব প্রাণীর রাজত্ব ছিল যা আমরা কেবল রূপকথার গল্পেই কল্পনা করতে পারি।


