SIR Voter List: বিহারের পর এবার পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের ১২টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে শুরু হতে চলেছে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ (Special Intensive Revision বা SIR)। সোমবার মুখ্য নির্বাচন কমিশনার (CEC) জ্ঞানেশ কুমার এই ঘোষণা করেন। তাঁর মূল বার্তা, কোনও যোগ্য নাগরিক যাতে বাদ না পড়েন এবং কোনও অযোগ্য ব্যক্তি যাতে তালিকায় স্থান না পান, তা নিশ্চিত করাই এই প্রক্রিয়ার লক্ষ্য।
মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানান, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তামিলনাড়ু, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়, গোয়া, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, লাক্ষাদ্বীপ, পুদুচেরি এবং আন্দামান ও নিকোবরে এই এসআইআর প্রক্রিয়া চলবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, আগামী বছর পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরল এবং পুদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা।
এসআইআর প্রক্রিয়ার সময়সূচি
নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার, ২৭ অক্টোবর রাত ১২টা থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির ভোটার তালিকা সংক্রান্ত সমস্ত কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, অর্থাৎ তালিকা ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার সময়সূচি নিচে দেওয়া হলো:
| কার্যক্রম | তারিখ |
|---|---|
| বিএলও-দের প্রশিক্ষণ এবং ফর্ম ছাপানো শুরু | ২৮ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর |
| বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিতরণ ও সংগ্রহ | ৪ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর |
| খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ | ৯ ডিসেম্বর |
| দাবি ও আপত্তি জানানোর সময়সীমা | ৯ ডিসেম্বর থেকে ৮ জানুয়ারি |
| অভিযোগের শুনানি ও নিষ্পত্তি | ৯ ডিসেম্বর থেকে ৩১ জানুয়ারি |
| চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ | ৭ ফেব্রুয়ারি |
তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে কাজ
এসআইআর প্রক্রিয়াটি মূলত তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে:
- প্রাক-এনুমারেশন: এই পর্বে বুথ লেভেল অফিসার (BLO), নির্বাচনী নিবন্ধন আধিকারিক (ERO) এবং অন্যান্য আধিকারিকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে বৈঠক করে পুরো প্রক্রিয়াটি বোঝানো হবে।
- এনুমারেশন: এই পর্বে BLO-রা প্রতিটি বাড়িতে কমপক্ষে তিনবার করে যাবেন। তাঁরা ভোটারদের কাছে ফর্ম পৌঁছে দেবেন, তা পূরণ করতে সাহায্য করবেন এবং সংগ্রহ করবেন। এই পর্যায়েই পোলিং স্টেশন প্রতি সর্বোচ্চ ১২০০ ভোটার রাখার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
- এনুমারেশন-পরবর্তী পর্যায়: এই ধাপে খসড়া তালিকা প্রকাশ, দাবি ও আপত্তির শুনানি এবং সবশেষে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
ভোটার হওয়ার মাপকাঠি কী?
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য চারটি প্রধান শর্ত পূরণ করতে হবে:
- ব্যক্তিকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে।
- বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হতে হবে।
- কোনও আইন দ্বারা ভোটাধিকার বাতিল হলে চলবে না।
যাঁরা কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে এলাকার বাইরে থাকেন, তাঁরা ‘ইসিআই নেট অ্যাপ’ (ECI Net App)-এর মাধ্যমে অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে পারবেন।
‘ম্যাপিং’ এবং প্রয়োজনীয় নথি
২০০২ সালের এসআইআর তালিকার সঙ্গে বর্তমান ভোটার তালিকা মিলিয়ে দেখার প্রক্রিয়াকে ‘ম্যাপিং’ বলা হচ্ছে। যদি কোনও ভোটারের নাম বা তাঁর বাবা-মায়ের নাম ২০০২ সালের তালিকায় থাকে, তবে তাঁকে শুধুমাত্র আবেদনপত্র (এনুমারেশন ফর্ম) জমা দিলেই হবে। কিন্তু যাঁদের নামের মিল পাওয়া যাবে না, তাঁদের নথি যাচাই করা হবে।
প্রয়োজনীয় নথিগুলির মধ্যে রয়েছে:
- জন্ম শংসাপত্র
- পাসপোর্ট
- মাধ্যমিক বা উচ্চশিক্ষার শংসাপত্র
- জমি বা বাড়ির দলিল
- ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস বা এলআইসি-র নথি (১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগেকার)
- জাতিগত শংসাপত্র
- বাসস্থানের শংসাপত্র
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, এই নথিগুলির সঙ্গে আধার কার্ডও জমা দেওয়া যাবে, তবে আধার কার্ড নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসাবে গণ্য হবে না।
কেন বাদ অসম?
পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে অসমেও আগামী বছর বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু সেখানে এই পর্বে এসআইআর হচ্ছে না। মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনে অসমের জন্য একটি বিশেষ ধারা (৬-এ) রয়েছে এবং সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে সেখানে নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কাজ চলছে। এই কারণেই আপাতত অসমকে এসআইআর প্রক্রিয়ার বাইরে রাখা হয়েছে।


