ORS Labeling Rule: একজন নারীর অদম্য ইচ্ছা এবং দীর্ঘ আট বছরের অক্লান্ত লড়াই দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম বদলে দিল। এটি শুধু একজন চিকিৎসকের জয় নয়, বরং মাতৃত্ব, সততা এবং নারীশক্তির এক অনবদ্য উদাহরণ। হায়দরাবাদের এক শিশু বিশেষজ্ঞের একক প্রচেষ্টায় এখন থেকে দেশের কোনো কোম্পানি তাদের তৈরি খাবার বা পানীয়র প্যাকেজিং বা বোতলে ইচ্ছেমতো ‘ORS’ শব্দটি লিখতে পারবে না। এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পেছনের কারিগর হলেন ডা. শিবরঞ্জনী সন্তোষ।
তার এই দীর্ঘ লড়াইয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তিনি আবেগে কেঁদে ফেলেন। এই জয় প্রমাণ করে যে, একজন সাধারণ নারীও যদি কোনো সঠিক উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যান, তবে তিনি দেশের আইন পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন।
কেন এই ৮ বছরের দীর্ঘ লড়াই?
ডা. শিবরঞ্জনী সন্তোষ, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ হিসেবে, দীর্ঘদিন ধরে একটি বিষয় লক্ষ্য করছিলেন যা তাকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছিল। তিনি দেখেছিলেন যে, বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন এনার্জি ড্রিংক এবং অন্যান্য পানীয় সংস্থাগুলো তাদের পণ্যের লেবেলে প্রতারণামূলকভাবে ‘ORS’ শব্দটি ব্যবহার করছে।
প্রকৃত ORS (Oral Rehydration Solution) হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) দ্বারা অনুমোদিত একটি জীবনদায়ী ফর্মুলা, যা মূলত ডায়রিয়া বা ডিহাইড্রেশনের সময় শিশুদের জীবন রক্ষা করে। কিন্তু বাজারে উপলব্ধ অনেক পানীয়তে এই ফর্মুলার পরিবর্তে শুধুমাত্র চিনি এবং অন্যান্য উপাদান থাকে, যা শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে।
ডা. সন্তোষের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই — এই মিথ্যাচারের অবসান ঘটানো। তিনি চেয়েছিলেন, সাধারণ মানুষ যেন ‘ORS’ নাম দেখে ভুল পথে চালিত না হন এবং তাদের শিশুরা যেন মিথ্যা লেবেলের শিকার হয়ে ক্ষতির মুখে না পড়ে।
নতুন নিয়মটি কী?
ডা. শিবরঞ্জনীর দীর্ঘ আট বছরের লড়াইয়ের ফলস্বরূপ, দেশে একটি নতুন নিয়ম কার্যকর হয়েছে। এই নিয়ম অনুযায়ী:
- এখন থেকে যেকোনো খাবার বা পানীয় প্রস্তুতকারক সংস্থাকে তাদের পণ্যে ‘ORS’ শব্দটি ব্যবহার করতে হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা WHO-এর অনুমোদন নিতে হবে।
- WHO দ্বারা নির্ধারিত ফর্মুলা অনুসরণ না করলে কোনোভাবেই এই শব্দটি ব্যবহার করা যাবে না।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাজারে নকল বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পানীয়কে ‘ORS’ বলে বিক্রি করার প্রবণতা বন্ধ হবে। এটি দেশের লক্ষ লক্ষ শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
মাতৃত্ব ও সততার জয়
ডা. শিবরঞ্জনী সন্তোষের এই জয় শুধুমাত্র একজন চিকিৎসকের পেশাগত সাফল্য নয়। এটি একজন মা এবং একজন সৎ নাগরিকের জয়। তার এই লড়াইয়ে কোনো বড় সংস্থা বা দলের সমর্থন ছিল না; তিনি একাই এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন। তার এই সাফল্য দেশের সকল নারীর জন্য এক বিশাল অনুপ্রেরণা। এটি আবারও প্রমাণ করল যে, সততা, নিষ্ঠা এবং একাগ্রতা থাকলে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। তার এই লড়াই আগামী দিনে আরও অনেককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সাহস যোগাবে।


