India Defence Export: বিশ্বের দরবারে ভারত ক্রমশ এক নতুন সুপারপাওয়ার হিসেবে নিজের স্থান পাকা করছে। তবে এবার শুধু অর্থনীতি বা প্রযুক্তিতেই নয়, অস্ত্র রপ্তানির বাজারেও ভারত তার শক্তি প্রদর্শন করতে শুরু করেছে। সম্প্রতি, দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের সাথে ভারতের একটি বিশাল অস্ত্র চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত, যা দেশের প্রতিরক্ষা শিল্পে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে। এই চুক্তির অধীনে, ভারত ব্রাজিলকে প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকার ‘আকাশ’ এবং ‘ব্রহ্মোস-এনজি’ মিসাইল বিক্রি করতে চলেছে।
এই চুক্তিটি ভারতের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের এক বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। অতীতে ভারত বিশ্বের অন্যতম বড় অস্ত্র আমদানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই ছবিটা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক অস্ত্র এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশও কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে, যার অন্যতম বড় উদাহরণ হলো ব্রাজিলের সাথে এই মিসাইল চুক্তি।
দুই মিসাইলের বিধ্বংসী ক্ষমতা
এই চুক্তির কেন্দ্রে রয়েছে দুটি শক্তিশালী মিসাইল সিস্টেম — ‘আকাশ’ এবং ‘ব্রহ্মোস-এনজি’। দুটি মিসাইলই নিজ নিজ ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকরী এবং শত্রুপক্ষের জন্য বিধ্বংসী। এদের কার্যক্ষমতা এবং বৈশিষ্ট্য ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণার উৎকর্ষতাকে প্রমাণ করে।
আকাশ (Akash): এটি একটি মাঝারি পাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য (Surface-to-Air) মিসাইল। এর প্রধান কাজ হলো শত্রুপক্ষের বিমান, ড্রোন বা হেলিকপ্টারকে মাঝ আকাশেই ধ্বংস করে দেওয়া। প্রায় ২৫ কিলোমিটার পাল্লার এই মিসাইলটি ভারতের আকাশসীমা রক্ষায় এক নির্ভরযোগ্য প্রহরী।
ব্রহ্মোস-এনজি (BrahMos-NG): ‘ব্রহ্মোস’ মিসাইলের নতুন প্রজন্মের এই সংস্করণটি আরও ভয়ঙ্কর এবং নিখুঁত। এর পাল্লা প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত, যা এটিকে একটি কৌশলগত অস্ত্রে পরিণত করেছে। এই সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলটি আকাশ থেকে ভূমিতে থাকা যেকোনো লক্ষ্যবস্তুকে নির্ভুলভাবে ধ্বংস করতে সক্ষম।
নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে মিসাইল দুটির প্রধান বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
| বৈশিষ্ট্য | আকাশ মিসাইল | ব্রহ্মোস-এনজি মিসাইল |
|---|---|---|
| ধরণ | ভূমি থেকে আকাশ (Surface-to-Air) | আকাশ থেকে ভূমি (Air-to-Surface) |
| পাল্লা (Range) | প্রায় ২৫ কিমি | প্রায় ৪৫০ কিমি |
| প্রধান কাজ | শত্রুপক্ষের বিমান বা ড্রোন ধ্বংস করা | ভূমি বা সমুদ্রে থাকা লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করা |
বিশ্ব অস্ত্রবাজারে ভারতের উত্থান
এই ৮,০০০ কোটি টাকার চুক্তিটি কেবল একটি বাণিজ্যিক লেনদেন নয়, এটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারতের ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরও প্রতীক। এর মাধ্যমে ভারত-ব্রাজিল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত হবে। পাশাপাশি, এই চুক্তি অন্যান্য দেশকেও ভারত থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য উৎসাহিত করবে। এটি প্রমাণ করে যে ভারত এখন শুধু অস্ত্রের ক্রেতা নয়, একজন নির্ভরযোগ্য বিক্রেতা হিসেবেও বিশ্ব মঞ্চে উঠে আসছে, যা দেশের অর্থনীতি এবং কৌশলগত অবস্থানের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক একটি দিক।


