Dearness Allowance: সুপ্রিম কোর্টে ডিএ (DA) মামলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তার অবস্থান স্পষ্ট করতে একটি হলফনামা জমা দিয়েছে। রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা কেন্দ্রীয় হারে দেওয়া সম্ভব কিনা, এই নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কে নতুন মোড় যোগ করেছে রাজ্য সরকারের এই লিখিত জবাব। রাজ্যের বক্তব্য অনুযায়ী, দেশের একাধিক রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না এবং এটি প্রদানে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতাও নেই। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে।
রাজ্যের মূল যুক্তি
পশ্চিমবঙ্গ সরকার সুপ্রিম কোর্টে যে লিখিত যুক্তি দিয়েছে, তার মূল বিষয়গুলি হল:
- অন্যান্য রাজ্যের উদাহরণ: রাজ্য সরকার জানিয়েছে যে দেশের অন্তত ১২টি রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ প্রদান করে না। এই রাজ্যগুলির তালিকায় রয়েছে কেরালা, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, তেলেঙ্গানা এবং ত্রিপুরা। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই রাজ্যগুলির বেশিরভাগই বিজেপি বা তার জোট দ্বারা শাসিত।
- বাধ্যবাধকতার অভাব: রাজ্যের মতে, কেন্দ্রীয় সরকারের ডিএ নীতি অনুসরণ করা কোনো রাজ্যের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। প্রতিটি রাজ্য তার নিজস্ব আর্থিক ক্ষমতা এবং কর্মচারীদের জন্য উপলব্ধ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে ডিএ প্রদান করে।
- মৌলিক অধিকার নয়: সরকার আরও দাবি করেছে যে মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মচারীদের মৌলিক অধিকার নয়। কর্মচারীরা কেবল রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তি বা পরিষেবা বিধি দ্বারা মঞ্জুর করা পরিমাণই দাবি করতে পারেন।
মূল্যবৃদ্ধি সূচক (CPI) এবং ROPA নিয়ম
রাজ্য সরকার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছে। তারা জানিয়েছে যে ছত্তিশগড়, মেঘালয়, হিমাচল প্রদেশ এবং সিকিমের মতো চারটি রাজ্য তাদের ‘রিভিশন অফ পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স’ (ROPA) নিয়মে উল্লেখ থাকা সত্ত্বেও ডিএ গণনার জন্য উপভোক্তা মূল্য সূচক (Consumer Price Index) অনুসরণ করে না। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বোঝাতে চেয়েছে যে ডিএ প্রদানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাজ্য বিভিন্ন নীতি অনুসরণ করে এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট নিয়মের শৃঙ্খলে বাঁধা নয়।
কর্মচারীদের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ
রাজ্য সরকারের এই যুক্তিতে স্বাভাবিকভাবেই হতাশ রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। কর্মচারী সংগঠনগুলি দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের মতে, মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সংসার চালাতে গিয়ে মহার্ঘ ভাতা তাদের ন্যায্য অধিকার।
সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার পরবর্তী শুনানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। আদালত রাজ্যের এই যুক্তিগুলিকে কীভাবে দেখবে এবং কর্মচারীদের দাবির বিষয়ে কী রায় দেবে, তার উপরেই নির্ভর করছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ সরকারি কর্মচারীর ভবিষ্যৎ। আপাতত, সমস্ত পক্ষই শীর্ষ আদালতের রায়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।