Cat’s hearing: আমরা অনেকেই বাড়িতে বিড়াল পুষি বা আমাদের আশেপাশে তাদের প্রায়শই দেখতে পাই। তাদের শান্ত ও আদুরে স্বভাব আমাদের মুগ্ধ করে। কিন্তু এই নিরীহ চেহারার আড়ালে যে এক অত্যন্ত দক্ষ এবং নিখুঁত শিকারি লুকিয়ে আছে, তা কি আমরা ভেবে দেখেছি? তাদের এই অসাধারণ শিকারি বুদ্ধির মূল রহস্য অন্য কোথাও নয়, বরং লুকিয়ে আছে তাদের দুটি কানের মধ্যেই। বিড়ালের শ্রবণশক্তি এতটাই প্রখর যে তা তাদের পৃথিবীর অন্যতম সেরা শিকারি প্রাণীর তকমা দিয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আমরা বিড়ালের শ্রবণশক্তির সেই অবাক করা দুনিয়ায় প্রবেশ করব এবং জানব কীভাবে এই বিশেষ ক্ষমতা তাদের অন্ধকারেও শিকার ধরতে সাহায্য করে।
কানের গঠন ও অবিশ্বাস্য ক্ষমতা
বিড়ালের কানের গঠন অত্যন্ত জটিল এবং বিশেষভাবে তৈরি, যা তাদের শিকার করার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত সুবিধা প্রদান করে। আপনি কি জানেন যে একটি বিড়ালের প্রতিটি কানে ৩২টি ভিন্ন ভিন্ন পেশি (muscles) থাকে? এই বিপুল সংখ্যক পেশি তাদের কানকে প্রায় সবদিকে ঘোরানোর ক্ষমতা দেয়।
- ১৮০ ডিগ্রি ঘূর্ণন: এই ৩২টি পেশির সাহায্যে বিড়াল তাদের কানকে স্বাধীনভাবে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরাতে পারে। এর ফলে তাদের মাথা না ঘুরিয়েই চারপাশের শব্দের উৎসের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
- স্বাধীন শ্রবণ: আরও অবাক করা বিষয় হলো, তারা একই সময়ে তাদের দুটি কানকে দুটি ভিন্ন দিকে ঘোরাতে পারে। এর মাধ্যমে তারা একই সঙ্গে দুটি আলাদা আলাদা উৎসের শব্দ বিশ্লেষণ করতে সক্ষম, যা তাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা সম্পর্কে সর্বদা সজাগ রাখে।
এই ক্ষমতাগুলি তাদের শিকারি হিসেবে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। জঙ্গলে বা অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা শিকারের সামান্যতম নড়াচড়ার শব্দও তাদের কান এড়ায় না।
মানুষ বনাম বিড়াল: শ্রবণশক্তির বিশাল পার্থক্য
মানুষের শ্রবণশক্তির একটি নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। আমরা সাধারণত ২০ হার্জ (Hertz) থেকে ২০ কিলোহার্জ (Kilohertz) পর্যন্ত কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পাই। কিন্তু বিড়ালের ক্ষেত্রে এই সীমা বহুগুণ বেশি।
একটি সুস্থ বিড়াল প্রায় ৬৫ কিলোহার্জ পর্যন্ত উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দও শুনতে সক্ষম। অর্থাৎ, মানুষের তুলনায় তাদের শ্রবণশক্তি প্রায় তিন গুণ বেশি সূক্ষ্ম এবং শক্তিশালী। এই কারণেই তারা এমন অনেক শব্দ শুনতে পায় যা মানুষের কানে শোনা যায় না, যেমন ইঁদুরের মতো ছোট প্রাণীর অত্যন্ত ক্ষীণ শব্দ বা পোকামাকড়ের নড়াচড়ার আওয়াজ। এই অসাধারণ শ্রবণশক্তিই তাদের অন্ধকারে শিকার করার মূল হাতিয়ার।
নিখুঁত শিকারি হয়ে ওঠার রহস্য
বিড়ালের শিকারি প্রবৃত্তির পিছনে তাদের শ্রবণশক্তির ভূমিকাই প্রধান। যখন রাতের অন্ধকারে দৃষ্টিশক্তি ততটা কার্যকর থাকে না, তখন তারা পুরোপুরি তাদের কানের উপর নির্ভর করে। শুধু শব্দের দিক চিনে নিয়েই তারা শিকারের সঠিক অবস্থান এবং দূরত্ব নির্ভুলভাবে অনুমান করতে পারে।
তাদের কান একটি বায়োলজিক্যাল র্যাডারের মতো কাজ করে, যা শিকারের সামান্যতম শব্দ তরঙ্গকে ধরে ফেলে এবং মস্তিষ্কে একটি নিখুঁত ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরি করে। এই কারণেই একটি বিড়াল সম্পূর্ণ অন্ধকারেও লাফ দিয়ে নির্ভুলভাবে তার শিকারকে ধরতে পারে। তাদের এই অসাধারণ শ্রবণশক্তিই তাদের করে তুলেছে পৃথিবীর অন্যতম নিখুঁত এবং সফল শিকারি প্রাণী।


