Great Wall of India: ভারতের ইতিহাসে এমন অনেক স্থাপত্যকীর্তি রয়েছে যা শুধুমাত্র দেশেই নয়, বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। যখনই বিশ্বের দীর্ঘতম প্রাচীরের কথা আসে, আমাদের মনে চীনের মহাপ্রাচীরের ছবি ভেসে ওঠে। কিন্তু আপনি কি জানেন, বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীরটি ভারতেই অবস্থিত? রাজস্থানের রাজসমন্দ জেলায় আরাবল্লী পাহাড়ের বুকে গর্বের সঙ্গে দাঁড়িয়ে আছে কুম্ভলগড় দুর্গ এবং তার সুবিশাল প্রাচীর, যা আজ ‘গ্রেট ওয়াল অফ ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত।
এই দুর্গ এবং তার প্রাচীর ভারতের এক গৌরবময় ইতিহাসের সাক্ষী। এটি শুধুমাত্র একটি স্থাপত্য নয়, বরং রাজপুতদের সাহস, বীরত্ব এবং দৃঢ়তার এক জীবন্ত প্রতীক।
কুম্ভলগড় দুর্গের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
১৫শ শতকে মেওয়াড়ের পরাক্রমশালী শাসক মহারানা কুম্ভা এই দুর্গটি নির্মাণ করেন। এই দুর্গ নির্মাণের মূল উদ্দেশ্য ছিল শত্রুদের আক্রমণ থেকে মেওয়াড় রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখা। কুম্ভলগড় দুর্গটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছিল যে এটি প্রায় অজেয় ছিল। বহুবার শত্রুরা এই দুর্গ দখলের চেষ্টা করলেও, এর শক্তিশালী প্রাচীরের সামনে তাদের সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এই দুর্গের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আরও বেড়ে যায় কারণ এখানেই জন্মেছিলেন ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা, মেওয়াড়ের বীর সন্তান মহারাণা প্রতাপ। এই দুর্গ একসময় মেওয়াড় রাজ্যের শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং এর প্রাচীর অগণিত বছর ধরে রাজ্যের সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করেছে।
স্থাপত্যের বিস্ময়: ভারতের মহাপ্রাচীর
কুম্ভলগড় দুর্গের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল এর প্রাচীর, যা প্রায় ৩৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই প্রাচীরটি চীনের মহাপ্রাচীরের পর বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাহাড়ের বন্ধুর পথ ধরে সর্পিল আকারে এগিয়ে চলা এই প্রাচীরটি আজও স্থাপত্যকলার এক অসাধারণ নিদর্শন হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে।
এই প্রাচীরটি কেবল দীর্ঘই নয়, এর গঠনশৈলীও অত্যন্ত উন্নত। বহু শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও এটি আজও প্রায় অটুট অবস্থায় রয়েছে, যা তৎকালীন কারিগরদের দক্ষতার পরিচয় দেয়। আজও এই প্রাচীর যেন ফিসফিস করে রাজপুতদের গৌরবময় অতীতের গল্প বলে যায়।
| বিষয় | বিবরণ |
|---|---|
| অবস্থান | রাজসমন্দ, রাজস্থান |
| প্রাচীরের দৈর্ঘ্য | প্রায় ৩৬ কিলোমিটার |
| নির্মাতা | রাজা রাণা কুম্ভা (১৫শ শতক) |
| বিশেষত্ব | বিশ্বের দ্বিতীয় দীর্ঘতম প্রাচীর |
বর্তমানের কুম্ভলগড়
আজ কুম্ভলগড় দুর্গ এবং এর প্রাচীর ভারতের এক অমূল্য ঐতিহ্য। এটি শুধুমাত্র ইতিহাসের সাক্ষী নয়, পর্যটকদের কাছেও এক অন্যতম আকর্ষণ। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ এই ঐতিহাসিক স্থাপত্য দেখতে আসেন। এই প্রাচীরের উপর দাঁড়িয়ে চারিদিকের দৃশ্য দেখলে মনে হয় যেন সময় থেমে গেছে এবং ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া যায়।
কুম্ভলগড় দুর্গ আমাদের মনে করিয়ে দেয় সেই অটুট সাহসের কথা, যা প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকতে শেখায়। ইতিহাসের পাতায় নয়, এই প্রাচীর আজও তার বার্তা দিয়ে চলেছে — “যেখানে সাহস আছে, সেখানে গৌরব অমর।”


