Carbon Capture: বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন আজ মানবজাতির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂)-এর মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি আমাদের গ্রহের তাপমাত্রাকে ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলছে। এমন এক সংকটময় পরিস্থিতিতে আইসল্যান্ডের বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী অভিযানের সূচনা করেছেন, যা কেবল আশার আলোই দেখাচ্ছে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ভাবতে পারেন, এখন এমন প্রযুক্তি এসেছে যা সরাসরি বাতাস থেকে ক্ষতিকর কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে সেটিকে মাটির নিচে পাথরে পরিণত করে দিচ্ছে!
যুগান্তকারী প্রযুক্তি: Direct Air Capture System
আইসল্যান্ডের এই অসাধারণ কাজটি সম্ভব হচ্ছে ডাইরেক্ট এয়ার ক্যাপচার (Direct Air Capture) সিস্টেম নামক এক বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে। এই ব্যবস্থায় ব্যবহৃত বিশাল আকারের যন্ত্রগুলো অনেকটা ভ্যাকুয়াম ক্লিনারের মতো কাজ করে। যন্ত্রগুলি পরিবেশের বাতাস থেকে সরাসরি কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে সেটিকে আলাদা করে ফেলে। এই প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি বায়ুমণ্ডল থেকে গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে সরাসরি ভূমিকা পালন করে।
বিজ্ঞানীরা এই শোষিত কার্বন ডাই-অক্সাইডকে ভূগর্ভে পাঠিয়ে দেন, যেখানে শুরু হয় আসল বিস্ময়। সেখানে নির্দিষ্ট রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এই গ্যাসীয় পদার্থটি ধীরে ধীরে কঠিন শিলায় রূপান্তরিত হয়। অর্থাৎ, যে কার্বন ডাই-অক্সাইড একসময় বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা বাড়াচ্ছিল, সেটি এখন চিরকালের জন্য মাটির নিচে চুনাপাথরের মতো শক্ত শিলায় পরিণত হচ্ছে।
কেন এই পদ্ধতিটি গুরুত্বপূর্ণ?
এই পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি একটি স্থায়ী সমাধান। যেখানে গাছ লাগিয়ে কার্বন শোষণের মতো প্রাকৃতিক পদ্ধতিগুলো সময়সাপেক্ষ এবং বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল, সেখানে এই প্রযুক্তি সরাসরি এবং দ্রুততার সাথে কাজ করে। এর মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে জমে থাকা অতিরিক্ত কার্বনকে স্থায়ীভাবে সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে।
- স্থায়ী সমাধান: গ্যাসকে পাথরে পরিণত করার ফলে তা পুনরায় বায়ুমণ্ডলে ফিরে আসার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
- জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা: এই প্রক্রিয়াটি পৃথিবীর তাপমাত্রা কমাতে এবং জলবায়ু স্থিতিশীল করতে সাহায্য করতে পারে।
- ভবিষ্যতের আশা: পরিবেশবিদরা এই পদ্ধতিকে পৃথিবীর ভবিষ্যতের জন্য এক “কার্বন টাইম মেশিন” (Carbon Time Machine) বলে অভিহিত করছেন, যা আমাদের গ্রহকে ধীরে ধীরে গরম হওয়া থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রাখে।
আইসল্যান্ডের এই সাফল্য প্রমাণ করে দিয়েছে যে, মানুষ চাইলে প্রকৃতির ক্ষতি না করে, বরং প্রকৃতির পাশে দাঁড়িয়েও প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে পারে। যখন বিজ্ঞান ও প্রকৃতি হাতে হাত রেখে কাজ করে, তখন পৃথিবীও নতুন করে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ পায়। এই যুগান্তকারী অভিযানটি হয়তো বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।
“`


