China surveillance: ভাবুন তো একবার, আপনি যখন শহরের রাস্তায় হাঁটছেন, কোনো পার্কে প্রিয়জনের সাথে বসে গল্প করছেন অথবা কোনো দোকানে নিজের পছন্দের জিনিসটি কিনছেন, তখন অদৃশ্য হাজারো চোখ আপনার প্রতিটি পদক্ষেপকে অনুসরণ করছে। এই কল্পনাটি কোনো সাই-ফাই সিনেমার দৃশ্য নয়, বরং চীনের কোটি কোটি মানুষের দৈনন্দিন বাস্তবতা। প্রযুক্তি এবং নিরাপত্তার নামে চীন আজ এমন এক নজরদারির বলয়ে প্রবেশ করেছে যা বিশ্বজুড়ে আলোচনার এবং উদ্বেগের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।
ক্যামেরার জালে বন্দী চীন?
সারা বিশ্বে নজরদারির নিরিখে চীন আজ শীর্ষস্থানে রয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ৫৬ কোটি (৫৬০ মিলিয়ন) সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক ক্যামেরার অর্থ হলো, চীনের প্রতি দুইজন নাগরিকের জন্য গড়ে প্রায় একটি ক্যামেরা রয়েছে। এই পরিসংখ্যানটি কেবল একটি সংখ্যা নয়, বরং এটি একটি রাষ্ট্রের তার নাগরিকদের উপর কী পরিমাণ নজর রাখছে তার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে।
বিশেষ করে বেইজিং এবং সাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলি সম্পূর্ণভাবে এই ক্যামেরা নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। এই শহরগুলোর প্রতিটি কোণ, প্রতিটি রাস্তা এবং পাবলিক প্লেস ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এই নেটওয়ার্ক এতটাই উন্নত যে, এটি নাগরিকদের গতিবিধি রিয়েল-টাইমে ট্র্যাক করতে সক্ষম। এর ফলে, কে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে দেখা করছে, সেই সমস্ত তথ্য সহজেই কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে যায়।
স্মার্ট সার্ভেইল্যান্স: নিরাপত্তা নাকি গোপনীয়তার বলি?
চীন সরকার এই ব্যাপক নজরদারি ব্যবস্থাকে “স্মার্ট সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম” (Smart Surveillance System) নামে অভিহিত করে। তাদের মতে, এই ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হলো:
- অপরাধ দমন: ক্যামেরা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করা এবং অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধ করা সহজ হয়।
- নিরাপত্তা নিশ্চিত: জনবহুল এলাকায় নিরাপত্তা বজায় রাখা এবং যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা দ্রুত মোকাবেলা করা সম্ভব হয়।
সরকারিভাবে একে জননিরাপত্তার এক অপরিহার্য অংশ হিসেবে তুলে ধরা হলেও, অনেকেই এটিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার উপর এক চরম আঘাত হিসেবে দেখছেন। সমালোচকদের মতে, এই ব্যবস্থা নাগরিকদের প্রতিটি মুহূর্তকে পর্যবেক্ষণের অধীনে নিয়ে এসে তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করছে।
| বিষয় | তথ্য |
|---|---|
| মোট সিসিটিভি ক্যামেরা | প্রায় ৫৬ কোটি (৫৬০ মিলিয়ন) |
| নাগরিক প্রতি ক্যামেরা | প্রতি ২ জনের জন্য প্রায় ১টি |
| ব্যবস্থার নাম | স্মার্ট সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম |
এই প্রযুক্তি একদিকে যেমন নিরাপত্তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়, তেমনই অন্যদিকে এটি একটি ‘নজরদারি রাষ্ট্র’ (Surveillance State) তৈরির আশঙ্কাও তৈরি করে। যেখানে নাগরিকদের প্রতিটি কাজ, প্রতিটি গতিবিধি সরকারের নখদর্পণে থাকে, সেখানে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং স্বাধীনতার সংজ্ঞা নতুন করে লিখতে হয়। চীন এই দুইয়ের মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করবে, সেই প্রশ্নই এখন সবচেয়ে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


