Swedish Electric Road: বিশ্বজুড়ে যখন পরিবেশ দূষণ এবং জীবাশ্ম জ্বালানির সংকট নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, ঠিক সেই সময়ে আশার আলো দেখাচ্ছে সুইডেন। এমন এক প্রযুক্তির কথা ভাবুন, যেখানে আপনার বৈদ্যুতিক গাড়িটি রাস্তায় চলার সময়েই নিজে থেকে চার্জ হয়ে যাবে। এটি কোনো কল্পবিজ্ঞান নয়, বরং সুইডেনের হাত ধরে বাস্তবে রূপ নিতে চলা এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের নাম ‘ইলেকট্রিক রোড’ বা বৈদ্যুতিক রাস্তা, যা যানবাহন জগতে এক নতুন বিপ্লবের সূচনা করতে চলেছে।
কী এই ইলেকট্রিক রোড প্রযুক্তি?
সুইডেনের এই অসাধারণ প্রকল্পটি হলো ইউরোপের প্রথম স্থায়ী বৈদ্যুতিক রাস্তা। এই প্রযুক্তির মূল ধারণাটি অত্যন্ত সহজ অথচ কার্যকর। রাস্তার নিচে থাকবে বিশেষ বৈদ্যুতিক লাইন, যা একটি চার্জিং রেল হিসেবে কাজ করবে। যখন কোনো বৈদ্যুতিক গাড়ি বা ট্রাক এই রাস্তার উপর দিয়ে যাবে, তখন গাড়ির নিচে থাকা একটি বিশেষ সংযোগকারী যন্ত্র বা রিসিভার স্বয়ংক্রিয়ভাবে রাস্তার ওই বৈদ্যুতিক লাইনের সাথে সংযুক্ত হবে। এর ফলে, গাড়ি চলন্ত অবস্থাতেই তার ব্যাটারি রিচার্জ করতে পারবে। এই প্রক্রিয়াটি অনেকটা ট্রেনের মতো, যা ওভারহেড লাইন থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহ করে, কিন্তু এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ আসবে রাস্তা থেকেই।
ভবিষ্যতের পথে এক বড় লাফ
এই প্রকল্পটি শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়, এটি একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের দিকে এক বিশাল পদক্ষেপ। এর প্রধান সুবিধাগুলি হলো:
- দূষণ হ্রাস: বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার বাড়লে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমবে। ফলে, কার্বন নিঃসরণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে, যা পরিবেশকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলবে।
- খরচ সাশ্রয়: পেট্রোল বা ডিজেলের আকাশছোঁয়া দামের যুগে এই প্রযুক্তি গাড়ির মালিকদের জন্য এক বড় স্বস্তি নিয়ে আসবে। বিদ্যুতের মাধ্যমে চার্জ করার খরচ প্রচলিত জ্বালানির তুলনায় অনেকটাই কম হবে।
- রেঞ্জ অ্যাংজাইটি দূর: বৈদ্যুতিক গাড়ির মালিকদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হলো চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার ভয় বা ‘রেঞ্জ অ্যাংজাইটি’। ইলেকট্রিক রোডের মাধ্যমে চলন্ত অবস্থায় চার্জের সুবিধা থাকলে এই দুশ্চিন্তা আর থাকবে না।
২০২৫ সালের মধ্যেই বাস্তবায়ন
সুইডেন সরকার এবং প্রযুক্তিবিদরা এই প্রকল্পটিকে বাস্তবে রূপ দিতে দ্রুত গতিতে কাজ করছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যেই এই বৈদ্যুতিক রাস্তাটি পুরোপুরি চালু হয়ে যাবে। এটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে, সুইডেন বিশ্বের সামনে এক নতুন উদাহরণ স্থাপন করবে। বিশ্ব যখন একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ খুঁজছে, সুইডেন সেখানে নেতৃত্ব দিয়ে প্রমাণ করছে যে সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রযুক্তির মেলবন্ধনে যেকোনো অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। এই উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে বিশ্বজুড়ে পরিবহন ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।


