Solar Impulse 2: প্রচলিত জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে বিশ্ব কি পারবে এক নতুন পথে হাঁটতে? ভবিষ্যতের শক্তি কি সত্যিই লুকিয়ে আছে প্রকৃতির অফুরন্ত ভান্ডারে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এসেছে সুইজারল্যান্ডের এক যুগান্তকারী উদ্ভাবন, যা গোটা বিশ্বকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। তৈরি হয়েছে এমন এক বিমান যা আকাশে উড়তে এক ফোঁটা জ্বালানিও ব্যবহার করে না, বরং তার একমাত্র শক্তি হলো সূর্যের আলো।
বিশ্বের বৃহত্তম সৌরচালিত বিমান
সুইজারল্যান্ডের প্রযুক্তিবিদ এবং গবেষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সৌরচালিত বিমান, যার নাম ‘সোলার ইমপালস ২’ (Solar Impulse 2)। এই বিমানটি শুধুমাত্র একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, এটি পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের দিকে এক বিশাল পদক্ষেপ। এর নকশা এবং কার্যকারিতা এতটাই অভিনব যে এটি বিমান প্রযুক্তি এবং পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ইতিহাসে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
বিমানের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং যুগান্তকারী দিক হলো এর জ্বালানি ব্যবস্থা। ‘সোলার ইমপালস ২’ কোনো রকম জীবাশ্ম জ্বালানি, যেমন পেট্রোল, ডিজেল বা গ্যাস ব্যবহার না করেই আকাশে উড়েছে। এর বিশাল ডানা জুড়ে লাগানো রয়েছে হাজার হাজার সোলার প্যানেল, যা সরাসরি সূর্যের আলোকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। এই শক্তিই বিমানটির মোটর চালায় এবং একে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আকাশে ভাসিয়ে রাখে।
জ্বালানি ছাড়াই ৪০,০০০ কিলোমিটার বিশ্বভ্রমণ
‘সোলার ইমপালস ২’ যে শুধুমাত্র পরীক্ষামূলকভাবে আকাশে উড়েছে তা নয়, এটি একটি অবিশ্বাস্য কীর্তি স্থাপন করেছে। শুধুমাত্র সূর্যের আলোর উপর নির্ভর করে এই বিমানটি প্রায় ৪০,০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে, যা একবার পুরো পৃথিবী প্রদক্ষিণ করার সমান। এই ঐতিহাসিক যাত্রাপথে বিমানটি বিভিন্ন মহাদেশ এবং মহাসাগর পাড়ি দিয়েছে, যা প্রমাণ করে যে সঠিক প্রযুক্তি থাকলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়।
এই বিশ্বভ্রমণের মাধ্যমে ‘সোলার ইমপালস ২’ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রমাণ করেছে:
- পরিবেশবান্ধব বিমান চলাচল: এটি দেখিয়েছে যে দূষণমুক্ত বিমান পরিবহন সম্ভব।
- পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষমতা: সূর্যের শক্তির যে অপার সম্ভাবনা রয়েছে, তা এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়েছে।
- মানবতার উদ্ভাবনী শক্তি: প্রতিকূলতাকে জয় করে নতুন প্রযুক্তি তৈরির ক্ষেত্রে মানুষের ক্ষমতাকে এটি আরও একবার তুলে ধরেছে।
এই সাফল্য স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয় যে, ভবিষ্যতের শক্তি সত্যিই সূর্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে। ‘সোলার ইমপালস ২’ এর এই যাত্রা শুধুমাত্র একটি বিমানের বিশ্বভ্রমণ নয়, এটি একটি সবুজ এবং সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে গোটা মানবজাতির এক সম্মিলিত যাত্রা।


