Cheapest Petrol: বিশ্বজুড়ে যখন জ্বালানির দাম প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে, তখন এমন একটি দেশের কথা ভাবুন তো যেখানে ১ লিটার পেট্রোল কিনতে আপনার খরচ হবে মাত্র ২ টাকা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে পেট্রোলের দাম এতটাই সস্তা যে তা যে কাউকে অবাক করে দিতে পারে। যেখানে অনেক দেশেই পেট্রোলের দাম আকাশছোঁয়া, সেখানে ইরানের এই নজিরবিহীন কম দাম একাধারে বিস্ময় এবং আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, কীভাবে এটা সম্ভব? এর পেছনের মূল কারণ এবং দেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
কেন ইরানে পেট্রোলের দাম এত কম?
ইরানে পেট্রোলের এই অবিশ্বাস্য কম দামের পেছনে প্রধান কারণ হলো দেশটির বিশাল প্রাকৃতিক তেলের ভান্ডার। ইরান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশ। নিজেদের এই প্রাকৃতিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে ইরান সরকার দেশের নাগরিকদের জন্য এক বিশেষ সুবিধা প্রদান করে। সরকার পেট্রোলের উপর বিশাল অঙ্কের ভর্তুকি দেয়, যার ফলে উৎপাদনের আসল খরচের তুলনায় অনেক কম দামে সাধারণ মানুষ পেট্রোল কিনতে পারে।
এই নীতির মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা এবং পরিবহন ব্যবস্থাকে সচল ও সাশ্রয়ী রাখা। সরকারের এই পদক্ষেপের ফলে ইরানের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বৃহৎ পরিবহন খাত পর্যন্ত সকলেই সরাসরি উপকৃত হয়।
অর্থনীতি ও সমাজে এর প্রভাব
পেট্রোলের কম দাম ইরানের অর্থনীতিতে একটি বড় ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- সাধারণ মানুষের সুবিধা: দৈনন্দিন জীবনে যাতায়াতের খরচ অনেকটাই কমে যায়, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে তোলে।
- পরিবহন খাতে সাশ্রয়: বাস, ট্রাক এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক যানবাহনের জ্বালানি খরচ কমে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনের খরচও নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও স্থিতিশীল রাখতে সুবিধা হয়।
- অর্থনৈতিক কার্যকলাপ: সস্তা জ্বালানির কারণে দেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায় এবং শিল্পখাতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
সস্তার মুদ্রার অপর পিঠ: কালোবাজারি
তবে এই সস্তা পেট্রোলের একটি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। দাম এতটাই কম হওয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোতে পেট্রোল চোরাচালানের মতো অবৈধ কার্যকলাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ইরানের সঙ্গে সীমান্ত থাকা দেশগুলিতে পেট্রোলের দাম অনেক বেশি হওয়ায় একটি অসাধু চক্র ইরান থেকে সস্তায় তেল কিনে কালোবাজারির মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি করে। এই চোরাচালান এবং কালোবাজারি ইরানের অর্থনীতির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
সবশেষে বলা যায়, ইরান একটি উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে যে কীভাবে একটি দেশ তার প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করে নিজের নাগরিকদের সুবিধা দিতে পারে এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে পারে। যদিও এর কিছু নেতিবাচক দিক রয়েছে, তবুও সরকারের এই নীতি দেশের সার্বিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


