Flying Kremlin: বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনেতাদের ব্যক্তিগত বিমান মানেই নিরাপত্তা এবং বিলাসবহুলতার এক চূড়ান্ত মিশ্রণ। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিমান এই ধারণাকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে। এটি কোনো সাধারণ প্রাইভেট জেট নয়, বরং আকাশে ভাসমান এক চলন্ত দুর্গ, যা পরিচিত “ফ্লাইং ক্রেমলিন” নামে। এই বিমানটি শুধুমাত্র একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়নি, এটি আদতে একটি পূর্ণাঙ্গ কমান্ড সেন্টার এবং যুদ্ধজাহাজ।
এই বিমানটিকে কেন ‘উড়ন্ত দুর্গ’ বলা হয়, তার পিছনে রয়েছে একাধিক কারণ। এটি শুধুমাত্র বিলাসবহুল নয়, বরং প্রযুক্তি এবং সামরিক শক্তিতে এতটাই উন্নত যে কোনো যুদ্ধের পরিস্থিতি আকাশ থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। এটি একইসঙ্গে একটি যুদ্ধকেন্দ্র, একটি স্যাটেলাইট হাব এবং একটি কমান্ড রুম হিসেবে কাজ করে, যা প্রেসিডেন্টকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিজের দেশের সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করে।
অত্যাধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা
“ফ্লাইং ক্রেমলিন”-এর সুরক্ষা ব্যবস্থা যেকোনো কল্পবিজ্ঞান সিনেমার থেকে কম কিছু নয়। বিমানটি অত্যাধুনিক সেন্সরে সজ্জিত, যার প্রধান কাজ হলো শত্রুপক্ষের যেকোনো ধরনের আক্রমণ থেকে বিমানটিকে রক্ষা করা। এর সেন্সরগুলি এতটাই শক্তিশালী যে বহু দূর থেকে ধেয়ে আসা কোনো ক্ষেপণাস্ত্রের আভাস পেলেই এটি সঙ্গে সঙ্গে পাইলটকে সতর্ক করে দেয়।
- তাত্ক্ষণিক অ্যালার্ম: শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্রের সংকেত পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানের ভেতরে বেজে ওঠে জরুরি অ্যালার্ম।
- দ্রুত রণকৌশল পরিবর্তন: অ্যালার্ম পাওয়ার পর পাইলট এক পলকের মধ্যে বিমানের দিক পরিবর্তন করেন এবং গতি পাল্টে ফেলেন, যাতে ক্ষেপণাস্ত্রটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
- “ওয়ার মোড” সক্রিয়করণ: এই সময়েই বিমানের বিশেষ “ওয়ার মোড” সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা বিমানটিকে একটি আত্মরক্ষাকারী যান থেকে এক আক্রমণাত্মক যুদ্ধযন্ত্রে পরিণত করে।
শুধু সুরক্ষাই নয়, আছে পাল্টা আক্রমণের ব্যবস্থাও
বিমানের “ওয়ার মোড” সক্রিয় হওয়ার পরেই শুরু হয় আসল খেলা। এটি শুধুমাত্র শত্রুর আক্রমণ থেকে নিজেকে বাঁচায় না, বরং পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্যও প্রস্তুত থাকে। এই মোড চালু হলে বিমান থেকে একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র, বোমা এবং গোলাগুলি শত্রুর দিকে নিক্ষেপ করা হয়। অর্থাৎ, এই বিমানটি মাটি থেকে হাজার হাজার ফুট উপরে থেকেও একটি ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের আকার নিতে পারে। এর আক্রমণাত্মক ক্ষমতা এতটাই বিধ্বংসী যে এটিকে একটি “যুদ্ধঘর” বা “Airborne War Room” বলাটা কোনো অত্যুক্তি নয়।
সুতরাং, ভ্লাদিমির পুতিনের এই বিমানটি নিছকই একটি বাহন নয়, এটি রাশিয়ার শক্তি, প্রযুক্তি এবং সামরিক প্রস্তুতির এক জীবন্ত প্রতীক, যা আকাশপথে দেশের প্রেসিডেন্টের জন্য এক দুর্ভেদ্য বর্ম তৈরি করেছে।


