First Bus History: আজকের পৃথিবীতে গণপরিবহণ ব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে বাস। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত লাক্সারি বাস থেকে শুরু করে আধুনিক ইলেকট্রিক বাস, আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে এই যান। কিন্তু আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন, এই যাত্রার সূচনা হয়েছিল কীভাবে? বিশ্বের প্রথম বাসটি কেমন ছিল? সেই ইতিহাস জানলে আপনি নিঃসন্দেহে অবাক হবেন।
আজ থেকে প্রায় দুই শতাব্দী আগে, অর্থাৎ ১৮২০ সালে, গণপরিবহণের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। ফ্রান্সের নঁত (Nantes) শহরে স্ট্যানিস্লাস বোড্রি (Stanislas Baudry) নামক একজন উদ্ভাবক প্রথম এই ধারণাটিকে বাস্তবে রূপ দেন। তবে আজকের দিনের মতো ইঞ্জিনচালিত কোনো যান নয়, বিশ্বের প্রথম বাসটি ছিল আদতে একটি ঘোড়ায় টানা বড় গাড়ি। এই অভিনব যানটির হাত ধরেই শুরু হয়েছিল এক অবিশ্বাস্য যাত্রা, যা আজও অব্যাহত।
“অমনিবাস” – নামের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল ইতিহাস
স্ট্যানিস্লাস বোড্রি তাঁর এই উদ্ভাবনের একটি চমৎকার নাম রেখেছিলেন – “অমনিবাস” (Omnibus)। এটি একটি ফরাসি শব্দ, যার আক্ষরিক অর্থ হলো “সবার জন্য”। এই নামটি থেকেই বোঝা যায়, এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সাধারণ মানুষের যাতায়াতের একটি মাধ্যম তৈরি করা। সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এটি ছিল এক যুগান্তকারী ধারণা, কারণ যানবাহন তখন মূলত ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বা উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। “অমনিবাস” সেই ধারণাকে ভেঙে দিয়ে গণপরিবহণের দরজা সকলের জন্য খুলে দিয়েছিল।
প্রযুক্তির ছোঁয়া: ঘোড়ার গাড়ি থেকে বাষ্পীয় ইঞ্জিন
ঘোড়ায় টানা “অমনিবাস” দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও মানবসভ্যতা থেমে থাকেনি। প্রযুক্তির অগ্রগতি খুব দ্রুতই পরিবহন ব্যবস্থায় নিজের ছাপ ফেলতে শুরু করে। প্রথম বাস তৈরির মাত্র এক দশকের মধ্যেই আসে সেই ঐতিহাসিক পরিবর্তন। ১৮৩১ সালে রাস্তায় নামানো হয় বিশ্বের প্রথম ইঞ্জিনচালিত বাস।
এই বাসটি চালানো হতো ভাপ বা বাষ্পীয় শক্তির (steam-powered) সাহায্যে। ঘোড়ার পরিবর্তে বাষ্পীয় ইঞ্জিন যুক্ত হওয়ায় যাতায়াতের গতি এবং ক্ষমতা দুটোই বহুগুণে বেড়ে যায়। এটি ছিল পরিবহন ব্যবস্থার এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা, যা পরবর্তীকালে পেট্রোল, ডিজেল এবং আজকের ইলেকট্রিক বাসের পথ তৈরি করে দিয়েছে।
ঐতিহ্য থেকে আধুনিকতা: এক দীর্ঘ যাত্রা
সেই ছোট্ট ঘোড়ায় টানা “অমনিবাস” থেকে আজকের অত্যাধুনিক বাস পর্যন্ত যাত্রাটা সত্যিই বিস্ময়কর। আজকের দিনে আমরা যে অটোমেটিক দরজা, এয়ার কন্ডিশনিং এবং উন্নত প্রযুক্তি উপভোগ করি, তার সবকিছুর ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল প্রায় ২০০ বছর আগে। ইতিহাসের সেই অধ্যায়টি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি কীভাবে সভ্যতাকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই পরেরবার যখন আপনি বাসে চড়বেন, একবার সেই প্রথম “অমনিবাস”-এর কথা ভেবে দেখতেই পারেন



