Statue of Unity: ভারতের গুজরাটে নর্মদা নদীর তীরে অবস্থিত স্ট্যাচু অফ ইউনিটি কেবল একটি মূর্তি নয়, এটি এখন ভারতের আত্মবিশ্বাস, অর্থনৈতিক পরিকল্পনা এবং জাতীয় গর্বের এক জীবন্ত প্রতীক। বিশ্বের সর্বোচ্চ এই মূর্তিটি যখন নির্মাণ করা হচ্ছিল, তখন এর বিপুল খরচ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু আজ সেই সমস্ত সমালোচনার জবাব দিয়েছে সময় এবং পর্যটকদের ঢল, যা এই প্রকল্পকে এক অভাবনীয় সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে।
স্থাপত্যের বিস্ময় ও প্রাথমিক সমালোচনা
সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের স্মরণে নির্মিত এই মূর্তিটির উচ্চতা ১৮২ মিটার, যা এটিকে বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তির তকমা দিয়েছে। এই বিশাল প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করতে সরকারের খরচ হয়েছিল প্রায় ₹৩,০০০ কোটি টাকা। স্বাভাবিকভাবেই, এত বিপুল পরিমাণ অর্থ একটি মূর্তির পিছনে ব্যয় করা নিয়ে দেশের বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, এই বিপুল অর্থ স্বাস্থ্য বা শিক্ষাখাতে ব্যয় করা যেত না? এই প্রকল্প আদৌ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে কিনা, তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল।
পর্যটনের স্রোতে বদলে গেল চিত্র
নির্মাণের পর সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়ার সাথে সাথেই স্ট্যাচু অফ ইউনিটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ পর্যটক এই স্থাপত্যের বিস্ময় দেখতে ভিড় জমাতে শুরু করেন। পর্যটকদের এই অভাবনীয় প্রবাহ সমস্ত পূর্বানুমানকে ছাপিয়ে যায়। এর ফলস্বরূপ, যা একসময় সমালোচনার বিষয় ছিল, তাই এখন প্রশংসার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আশ্চর্যজনকভাবে, মাত্র তিন বছরের মধ্যেই পর্যটন থেকে প্রাপ্ত আয় দিয়ে এই প্রকল্পের সম্পূর্ণ নির্মাণ ব্যয় উঠে এসেছে। এটি প্রমাণ করে যে, সঠিক পরিকল্পনা এবং দূরদৃষ্টি থাকলে একটি পর্যটন কেন্দ্র কীভাবে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। টিকিট বিক্রয়, হোটেল, পরিবহন এবং স্থানীয় অর্থনীতির উপর এর ইতিবাচক প্রভাব এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
শুধু মূর্তি নয়, উন্নয়নের প্রতীক
আজ স্ট্যাচু অফ ইউনিটি আর শুধু একটি দর্শনীয় স্থান নয়। এটি ভারতের সফল অর্থনৈতিক পরিকল্পনার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যে প্রকল্পকে একসময় দেশের অর্থের অপচয় বলে মনে করা হচ্ছিল, সেই প্রকল্পই আজ প্রতিনিয়ত দেশের কোষাগারে অর্থ যোগাচ্ছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। এটি প্রমাণ করে যে জাতীয় গর্ব এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন একে অপরের পরিপূরক হতে পারে। এই মহাকায় মূর্তিটি এখন ভারতের শক্তি, ঐক্য এবং উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে।


