Tree Painting Lime: রাস্তার ধারে, পার্ক বা স্কুল-কলেজের মাঠে সারি সারি গাছের দিকে তাকালে একটি দৃশ্য আমাদের সকলেরই চোখে পড়ে। সেটি হলো, গাছের কাণ্ডের নিচের অংশে সাদা রঙের প্রলেপ। অনেকেই মনে করেন এটি শুধুমাত্র গাছগুলোকে সুন্দর দেখানোর জন্য বা কোনো সরকারি চিহ্ন হিসেবে করা হয়। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ সঠিক নয়। গাছের গায়ে এই সাদা চুনের প্রলেপ শুধু সাজসজ্জার অঙ্গ নয়, এটি গাছের জন্য এক প্রাকৃতিক সুরক্ষা কবচ হিসেবে কাজ করে। এর পেছনে রয়েছে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক কারণ।
১. পোকামাকড় ও ছত্রাকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গাছের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় এবং ছত্রাক। গাছের বাকলের ফাটলে বা আর্দ্র অংশে এরা সহজেই বাসা বাঁধে এবং গাছের ক্ষতি করে। চুনের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড একটি শক্তিশালী জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। যখন গাছের কাণ্ডে চুনের প্রলেপ দেওয়া হয়, তখন এটি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং পোকামাকড়ের ডিম ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে গাছের কাণ্ডে পচন ধরা বা ছত্রাকের সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় এবং গাছ সুস্থ থাকে।
২. আবহাওয়ার প্রতিকূলতা থেকে সুরক্ষা
প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা গাছের স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। গ্রীষ্মকালে সূর্যের প্রচণ্ড তাপ এবং শীতকালে তীব্র ঠান্ডা, এই দুই চরম অবস্থাই গাছের বাকলের জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত গরমে গাছের বাকল উত্তপ্ত হয়ে ফেটে যেতে পারে, আবার শীতে তাপমাত্রা হঠাৎ কমে গেলেও একই সমস্যা দেখা দেয়। সাদা চুন একটি ইনসুলেটর বা অন্তরক পদার্থের মতো কাজ করে। এটি সূর্যের তাপকে প্রতিফলিত করে কাণ্ডকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং শীতের সময় তাপমাত্রার আকস্মিক পরিবর্তন থেকে বাকলকে রক্ষা করে। ফলে গাছের বাকল সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
৩. দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়ক
রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালানোর সময় রাস্তার ধারের গাছগুলো প্রায়ই চালকদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, যা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যেসব রাস্তায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই, সেখানে এই ঝুঁকি আরও বেশি। গাছের গায়ে লাগানো সাদা চুন এই সমস্যার এক সহজ সমাধান। সাদা রঙ আলোকে ভালোভাবে প্রতিফলিত করে। রাতের বেলা গাড়ির হেডলাইট পড়লে চুনের সাদা অংশটি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, ফলে চালক দূর থেকেই গাছের অবস্থান সম্পর্কে সতর্ক হতে পারেন। এটি একপ্রকার সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
৪. সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলার প্রতীক
বৈজ্ঞানিক কারণগুলোর পাশাপাশি এর একটি নান্দনিক দিকও রয়েছে। বিশেষ করে সরকারি দপ্তর, পার্ক, বিদ্যালয় বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণে যখন সমস্ত গাছে একই উচ্চতায় চুন করা হয়, তখন তা একটি পরিচ্ছন্ন ও সুশৃঙ্খল পরিবেশের জানান দেয়। এটি কেবল জায়গার সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে না, বরং একটি পরিচর্যা ও যত্নের বার্তাও দেয়।
সুতরাং, পরেরবার যখন গাছের গায়ে সাদা চুন দেখবেন, তখন শুধু সৌন্দর্য হিসেবে না দেখে এর পেছনের এই বৈজ্ঞানিক উপকারিতাগুলোও মনে রাখবেন। এই সামান্য উদ্যোগ গাছকে সুস্থ রাখতে এবং আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


