Waste to Energy: বিশ্বজুড়ে যখন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তখন উত্তর ইউরোপের একটি দেশ এই সমস্যাকেই সম্পদে পরিণত করে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। হ্যাঁ, আমরা সুইডেনের কথা বলছি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, সুইডেনে গৃহস্থালির বর্জ্যের মাত্র ১ শতাংশ ভাগাড় বা ল্যান্ডফিলে পাঠানো হয়। বাকি ৯৯ শতাংশ বর্জ্যকে কাজে লাগিয়ে তারা কেবল নিজেদের পরিবেশই রক্ষা করছে না, বরং শক্তি উৎপাদন করে দেশকে সমৃদ্ধ করছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত “waste-to-energy” বা বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদন মডেলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
সুইডেনের এই সাফল্য কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত এবং কার্যকরী নীতির ফসল। তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিসংখ্যানটি সত্যিই চমকে দেওয়ার মতো।
সুইডেনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিসংখ্যান
সুইডেনের মডেলে বর্জ্যকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করে ব্যবস্থাপনা করা হয়। প্রতিটি ভাগের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই তারা এই অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। নিচে একটি টেবিলের মাধ্যমে তাদের পরিসংখ্যান তুলে ধরা হলো:
| বর্জ্যের ব্যবহার | শতাংশ | বিবরণ |
|---|---|---|
| শক্তি উৎপাদন (Energy) | ৫২% | গৃহস্থালীর অর্ধেকেরও বেশি বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ এবং তাপ শক্তি উৎপাদন করা হয়। |
| পুনর্ব্যবহার (Recycling) | ৪৭% | কাগজ, প্লাস্টিক, কাচ, এবং ধাতুর মতো পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্যকে নতুন পণ্য তৈরির জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। |
| ল্যান্ডফিল (Landfill) | ১% | মাত্র এক শতাংশ বর্জ্য, যা কোনোভাবেই পুনর্ব্যবহার বা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহারযোগ্য নয়, সেগুলিকে ল্যান্ডফিলে পাঠানো হয়। |
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ: এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি
সুইডেনের মোট গৃহস্থালী বর্জ্যের ৫২ শতাংশই চলে যায় অত্যাধুনিক ইনসিনারেটর বা চুল্লিতে। সেখানে নিয়ন্ত্রিত উপায়ে এই বর্জ্য পুড়িয়ে যে তাপ শক্তি উৎপন্ন হয়, তা দিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বিদ্যুৎ দিয়ে সুইডেন প্রতিবছর দেশের লক্ষ লক্ষ ঘর আলোকিত করে এবং তাপ সরবরাহ করে। শীতপ্রধান এই দেশে ঘর গরম রাখার জন্য প্রয়োজনীয় তাপেরও একটি বড় অংশ আসে এই বর্জ্য পোড়ানো প্ল্যান্ট থেকে।
সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, সুইডেনের বর্জ্য থেকে শক্তি উৎপাদনের এই ব্যবস্থা এতটাই উন্নত এবং এর চাহিদা এতটাই বেশি যে, তাদের নিজেদের দেশের বর্জ্য দিয়েও চাহিদা পূরণ হয় না। ফলে, তারা প্রতিবেশী দেশগুলো যেমন নরওয়ে, যুক্তরাজ্য এবং আয়ারল্যান্ড থেকে বর্জ্য আমদানি করে। যে বর্জ্য অন্য দেশের জন্য বোঝা, সুইডেনের জন্য তা বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাঁচামাল।
এই মডেলটি প্রমাণ করে যে সঠিক প্রযুক্তি এবং পরিকল্পনা থাকলে আবর্জনার মতো বোঝাকেও জাতীয় সম্পদে পরিণত করা সম্ভব। সুইডেন কেবল নিজেদের দেশকে পরিষ্কারই রাখছে না, বরং বর্জ্যকে ব্যবহার করে শক্তি ক্ষেত্রেও স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।


